Abstract:
বিলুপ্ত সাহিত্য পত্রিকা ‘অমৃত’-র নাম এখন সেইভাবে কোথাও আলোচিত হয় না। অথচ ‘প্রবাসী’, ‘ভারতবর্ষ’, ‘সবুজপত্র’, ‘বিচিত্রা’, ‘পরিচয়’, ‘কবিতা’, ‘পূর্বাশা’, ‘শনিবারের চিঠি’ ছাড়াও একেবারে হাল আমলের ‘কলকাতা’, ‘অন্বিষ্ট’, ‘এক্ষণ’ ইত্যাদি সাময়িকপত্র নিয়ে নানা আলোচনা প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে ‘কোরক’ সাহিত্য পত্রিকার ২০০৬ সালের প্রাক-শারদ সংখ্যাটি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। এই বিশেষ সংখ্যাটির বিষয় ছিল ‘বিলুপ্ত সাহিত্য পত্র’। অপার বিস্ময়ে লক্ষ করা যায়, সেখানেও নানা বিলুপ্ত সাহিত্য সাময়িকপত্রের সঙ্গে উপরিউক্ত সবকটি পত্রিকা আলোচিত হলেও, কোথাও ‘অমৃত’-র উল্লেখ নেই।
প্রশ্ন আসতেই পারে ‘অমৃত’ সাহিত্য পত্রিকা নিয়ে গবেষণা কেন করেছি। ঘটনাটি এইরকম— বাড়িতে খুঁজে পাওয়া এই পত্রিকার নিউজ প্রিন্টে ছাপা কয়েকটি একেবারে জীর্ণ হয়ে যাওয়া সংখ্যা পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল, বিখ্যাত সাহিত্যপত্র ‘দেশ’-এর মতই বা প্রায় সমমানের ঋদ্ধ একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা ছিল ‘অমৃত’। এরপরেই আমার শিক্ষকপ্রতিম পিতার কাছ থেকে, যিনি ‘অমৃত’-র আবির্ভাব থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত প্রায় সবকটি সংখ্যা পড়েছেন, ‘অমৃত’-র নানা কথা তাঁর কাছ থেকে শুনতে লাগলাম। শুনলাম কীর্তিহাটের কড়চা, কবি রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ ও ক্রিস্টিন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস-এর কথা। সেই থেকেই এই বিলুপ্ত সাহিত্যপত্রটি নিয়ে গবেষণার একটি চিন্তা আমার মধ্যে আসে। একইসঙ্গে ছিল সচেতন সাহিত্য-পাঠকের দায়বদ্ধতার ব্যাপারটিও।
‘অমৃত’ নিয়ে গবেষণাপত্রটি আমি প্রস্তাবনাসহ আটটি অধ্যায় এবং উপসংহারের মাধ্যমে বিন্যস্ত করেছি। প্রথম অধ্যায়টি হল ‘অমৃত’ পত্রিকার সম্পাদকীয়: দেশ ও কালের প্রতিফলন। এখানে পত্রিকার নির্বাচিত সম্পাদকীয় কলমগুলি আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে মূলত সমকালের কথা প্রতিফলিত হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায় সাপ্তাহিক ‘অমৃত’ পত্রিকার সূচি-সংকলন-এ সাময়িকপত্রটির প্রায় সামগ্রিক সূচি নানা আঙ্গিকে সজ্জিত করা হয়েছে ভবিষ্যৎ পাঠক ও গবেষকগণের সুবিধার্থে। তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে ‘অমৃত’ সাহিত্য পত্রিকায় রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ‘অমৃত’-পত্রিকায় যত রচনা প্রকাশিত হয়েছে, তারই একটি সামগ্রিক আলোচনা এটিতে করা হল। চতুর্থ অধ্যায়টি নিদিষ্ট করা হয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ ও সাপ্তাহিক ‘অমৃত’ শিরোনামে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিবেকানন্দ-র প্রাসঙ্গিকতা যে অনস্বীকার্য, তা ‘অমৃত’-এ প্রকাশিত বিবেকানন্দ সম্পর্কীয় রচনাগুলির মধ্যেই নিহিত রয়েছে।
পত্রিকার সমগ্র আয়ুষ্কালটি ধরে যে বিপুল প্রবন্ধসম্ভার প্রকাশ পেয়েছে, তারই নির্বাচিত রচনাগুলি নিয়ে আলোচনা ও সবকটির উল্লেখ ‘অমৃত’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধ ও বিশেষ নিবন্ধ শীর্ষক পাঁচ নম্বর অধ্যায়ে আছে। ষষ্ঠ অধ্যায়টি সাপ্তাহিক ‘অমৃত’-এর কথাসাহিত্য নিয়ে। ‘অমৃত’-এ প্রকাশিত অসংখ্য ছোটোগল্প, ধারাবাহিক উপন্যাস এবং পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসগুলির বিস্তৃত আলোচনা এখানে করা হয়েছে। সপ্তম অধ্যায়টিতে আলোচিত হয়েছে ‘অমৃত’-য় প্রকাশিত কবিতা সম্ভার। নির্বাচিত কবিতার পর্যালোচনার সঙ্গে সঙ্গে এখানে প্রতিটি কবিতার প্রথম পংক্তিসহ একটি তালিকা নির্মিত হয়েছে। শেষ অষ্টম অধ্যায়টি হল নাটক প্রকাশনা এবং নাট্য-আলোচনায় ‘অমৃত’ পত্রিকা। প্রকাশিত নাটকগুলি এবং নাট্য-সম্পর্কীয় রচনাগুলি এখানে আলোচিত। বিভাজিত অধ্যায় সমূহে এবং উপসংহারে এই বিশাল গবেষণাকর্মের প্রাসঙ্গিকতা, বৈচিত্র্য ও দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিলুপ্ত সাহিত্যপত্র ‘অমৃত’-র সামগ্রিক ও হারিয়ে যাওয়া অমূল্য ও সমৃদ্ধ রচনাগুলির একটি সামগ্রিক এবং পূর্ণাঙ্গ রূপও বিবৃত হয়েছে। গবেষণার পরিশিষ্ট অংশেও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন করা হয়েছে।